শীতকাল মানেই সবজির রাজত্ব। আর এই রাজত্বের এক অন্যতম মুকুটধারী হলো পালং শাক। পুষ্টিগুণে ভরপুর, সুস্বাদু এবং সহজে চাষযোগ্য এই শাকটি আমাদের সবারই প্রিয়।
কিন্তু অনেকেই ভাবেন, শাক চাষ খুবই জটিল ব্যাপার। আজকে আমরা সেই ভুল ধারণা ভাঙতে এসেছি। এই পোস্টে আমরা আপনাকে পালং শাক চাষের খুবই সহজ উপায় জানাবো, যাতে আপনি নিজের উঠানেই তাজা পালং শাক উৎপাদন করতে পারবেন।
পালং শাক বা পালং সবজি চাষ করা খুবই সহজ। দেশের প্রায় সব এলাকায়ই এর চাষ করা যায়। নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে সফলভাবে পালং শাক চাষ করা যায়।
পালং শাক চাষের সময়
পালং শাক সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে, শীতকালে পালং শাকের চাষ বেশি হয়। কারণ, শীতকালে আবহাওয়া পালং শাকের জন্য উপযুক্ত থাকে।
পালং শাক চাষের উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়া
পালং শাক চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। এঁটেল ও বেলে-দোআঁশ মাটিতেও পালং শাক চাষ করা যায়। মাটির পিএইচ মান ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকলে ভালো হয়।
পালং শাক চাষের জন্য ২২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপযুক্ত। তবে, ১২ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও পালং শাক চাষ করা যায়।
পালং শাক চাষ পদ্ধতি
পালং শাক চাষের জন্য প্রথমে জমির মাটি আলগা করে নিয়ে, মাটিতে সার মিশিয়ে নিতে হবে।
সারের নাম | পরিমাণ প্রতি শত বর্গমিটার |
---|---|
গোবর সার | ৪০ কেজি |
ইউরিয়া | ১ কেজি |
টিএসপি | ৫০০ গ্রাম |
এমওপি | ৫০০ গ্রাম |
এরপর মাটি তৈরি হয়ে গেলে, সারিতে সারিবদ্ধভাবে বীজ লাগাতে হবে। প্রতি সারিতে ১৫ থেকে ২০ সেমি দূরত্বে বীজ লাগান। এরপর, হালকাভাবে মাটি চাপা দিয়ে দিন।
পালং শাক চাষে আগাছা দূর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগাছা পালং শাকের গাছের জন্য পুষ্টির উপাদান কেড়ে নেয়। ফলে পালং শাকের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আগাছা দূর করার জন্য হাত বা কোনো বৈদ্যুতিন যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন ।
বীজ বপনের পর, জমিতে নিয়মিত জল দিতে হবে। তবে, কখনোই খুব বেশী জল দেবেন না। এতে পালং শাকের গাছ পচে যেতে পারে।
সাধারণতঃ বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে যায়। একবার চারা গজালে, প্রতি সারিতে ১ থেকে ২টি চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
পালং শাক চাষের জন্য কোন বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তবে, নিয়মিত সেচ ও সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
ছায়াযুক্ত স্থানের জন্য আদর্শ গাছ
পালং শাক কখন তুলবেন?
পালং গাছে ফুল আসার আগেই পাতা সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণতঃ বীজ লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই আপনি পাতা তুলতে পারবেন। পাতা সংগ্রহের পর, গাছকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিতে সার প্রয়োগ করতে ভুলবেন না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রতি বিঘায় ২.৫ টন পালং শাক পাওয়া যায়।
পালং শাকের উপকারিতা
- দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে: পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পালং শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে: পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে: পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট রয়েছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে: পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
কারি পাতা: শুধু রান্নার উপাদান নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই পালং শাক চাষ করা যায়। ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করা জরুরি। পালং শাক চাষের সহজ উপায়গুলো জানার পরে আর কেন বাজার থেকে অজানা উৎসের শাক কিনবেন? নিজের উঠানে পালং শাক চাষ করে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মনও ভালো রাখুন। আর দেরি না করে আজই শুরু করুন আপনার পালং যাত্রা!