আমরা সাধারণতঃ খাওয়ার পর কলার খোসা ফেলে দিই, কিন্তু আপনি জানেন- এই অবহেলিত খোসার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আপনার গাছের জন্য প্রাকৃতিক সারের একটি শক্তিশালী উৎস? হ্যাঁ, কলার খোসা দিয়ে সহজেই বাড়িতে তৈরি করা যায় কার্যকরী সার, যা আপনার গাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধিতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
আজকে এই কলার খোসা নিয়ে আলোচনা করবো।
কলার খোসায় কি কি জিনিস আছে?
কলার খোসায় যে সব পুষ্টিকর উপাদান আছে সেগুলো হল:
- পটাশিয়াম
- ফসফরাস
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
এছাড়াও আছে বিটামিন, আমিনো অ্যাসিড, এবং ট্রাইকোডার্মা নামক উপকারী ছত্রাক, যা মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পালং শাকের সহজ চাষ পদ্ধতি-আজ থেকে ঘরেই চাষ করুন পালং শাক!
পটাশিয়াম
পটাশিয়াম হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি তোমাদের গাছের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পটাশিয়াম ফলের কোষদেয়ালকে শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়াও এটি গাছের কান্ডকে শক্তিশালী করে এবং ভালো মূল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ফসফরাস
দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় খনিজ উপাদান হল ফসফরাস। ফসফরাস মাটি খুব ভালোবাসে। এটি তোমাদের গাছে অঙ্কুরোদগম বৃদ্ধি করে, স্বাস্থ্যকর মূল তৈরি করে, ফুল আর ফল ধরতে সাহায্য করে।
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামও কলার খোসায় পাওয়া যায়। এগুলো তোমাদের গাছের সুন্দর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম মাটিতে পুষ্টি বাড়ায়, যাতে নাইট্রোজেন গাছে সহজে উপলভ্য হয়।
কলার খোসা কিভাবে ব্যবহার করবো?
এখন যেহেতু জেনে গেলে কলার খোসায় কি কি আছে, তাহলে দেখি কিভাবে সেগুলো ব্যবহার করবেন। চলুন এবার জেনে নিই কিভাবে এই কলার খোসা সার হিসেবে গাছে ব্যবহার করতে হয়।
১. কলার খোসার জল
খাওয়ার পর যে কলার খোসাগুলো থাকে, সেগুলো ফেলে দেয়ার পরিবর্তে জলে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। দু-তিন দিন পরে সেই জলটা গাছের গোড়ায় সার হিসেবে দিতে পারেন।
২. কম্পোস্ট সার
বিভিন্ন ফলের খোসা, ডিমের খোলা, চা-পাতা ইত্যাদি দিয়ে কম্পোস্ট বা সার তৈরি করতে পারেন। এতে কলার খোসাও মিশিয়ে নিতে পারেন।
৩. কলার খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করা
খুব ঝামেলা না চাইলে, কলার খোসাগুলো সূর্যে শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখতে পারেন। দরকার পড়লে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারেন।
৪. বীজ রোপণে ব্যবহার
টবে গাঁদা ফুলের চাষের 10 টি টিপস
গাছের বীজ রোপণের আগে, সেই জায়গায় ভালো করে গর্ত খুড়ে নিন। সেই গর্তে কলার খোসা ছোট ছোট টুকরো করে ফেলে দিন। এরপর, অর্ধেক মাটি দিয়ে গর্তটি ভরে নিয়ে তার উপর বীজ বা চারা লাগান। কলার খোসা মাটিতে পচে গেলে তা থেকে পুষ্টি উপাদান বেরিয়ে আসবে যা গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
৫. ভিনিগার ও কলার খোসা
দুই কাপ জলের সাথে আধ কাপ ভিনিগার মিশিয়ে কলার খোসা ভিজিয়ে রাখার পর সেই জলটা গাছের মূলে ছিটিয়ে দিলে মাটির পিএইচ সঠিক থাকবে।
ভিনিগার একটি হালকা অ্যাসিড, যার পিএইচ 3 থেকে 4 এর মধ্যে থাকে। কলার খোসায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে । ভিনিগার ও কলার খোসা একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মাটির পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকে। যা গাছের বৃদ্ধি, ফলন এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোন কোন গাছে কলার খোসার সার ব্যবহার করা যাবে?
কলার খোসার সার সব ধরনের গাছেই ব্যবহার করা যায়। তবে কিছু গাছের ক্ষেত্রে এর সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন:
- টমেটো: টমেটোর খাদ্য চাহিদায় বেশি পটাশিয়ামের প্রয়োজন হয়। তাই কলার খোসার সার টমেটোর জন্য খুবই উপকারী।
- আলু: আলুও পটাশিয়ামপ্রিয় গাছ। তাই এর জন্যও কলার খোসা ভালো কাজ করবে।
- রসুন: রসুনের বাল্ব বাড়াতে পটাশিয়াম প্রয়োজন। তবে বর্ধনার সময় নাইট্রোজেন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
- ফুলের গাছ: গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস ইত্যাদি ফুলের গাছে খোসার সারের ফল ভালো হয়।
- ফলের গাছ: কলা, আপেল, আম গাছেও খোসার সার দেওয়া যেতে পারে।
- সবজি গাছ: পেঁয়াজ, ব্রকলি, ফুলকপি ইত্যাদিতেও কলার খোসার সার দেওয়া যায়।
সাধারণত সব ধরনের গাছেই কলার খোসার সার ব্যবহার করা যায়। তবে পটাশিয়ামপ্রিয় গাছে এর সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়।
কলার খোসার সারের উপকারিতা
কলা ভালো খাবার, এবং কলার খোসাও অনেক পুষ্টিকর। যে পুষ্টিগুণ সবজির অভাব রয়েছে, কলার খোসা সেগুলো পূরণ করে।
- পটাশিয়াম হলো সর্বাধিক প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি গাছের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। পটাশিয়াম ফলের কোষদেয়ালকে শক্তিশালী করে, গাছের কান্ডকে শক্তিশালী করে এবং মূলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ফসফরাস অঙ্কুরোদগম, স্বাস্থ্যকর মূল এবং ফুল-ফলের উন্নতি ঘটায়। মাটি ফসফরাসকে খুব ভালোবাসে।
- ক্যালসিয়াম মাটিতে পুষ্টি বাড়ায়, যাতে নাইট্রোজেন গাছে সহজে উপলভ্য হয়।
- কলার খোসায় নাইট্রোজেন থাকে না। তাই শুধু কলার খোসার উপর নির্ভর করা ঠিক নয়। নাইট্রোজেনের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে এর সর্বোত্তম ফল পাওয়া যায়।
- এফিড প্রতিরোধেও কাজে লাগে কলার খোসা। কারণ এফিড কলার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।
টমেটো ও আলুর মতো পটাশিয়াম-প্রেমী গাছের ক্ষেত্রে কলার খোসার সার খুবই কার্যকরী। রসুনের বাল্বের জন্যও পটাশিয়াম প্রয়োজন, তবে বাদ দিতে হবে নাইট্রোজেন।
কলার খোসার সারের ব্যবহার
- ১ কাপ খোসার চা ১ গ্যালন পানিতে মিশিয়ে গাছের মূলে ছিটিয়ে দিতে পারেন।
- তাজা খোসাও গাছের চারপাশে পুঁতে দেওয়া যায়, যাতে পোকা-প্রাণী দূরে থাকে।
- কলার খোসা দ্রুত গাছে পৌঁছে দেয় পুষ্টি। মাটি নরম হয়ে যায় তাই খেয়াল রাখতে হবে।
- অন্যান্য সারের সাথে মিশিয়েই ব্যবহার করা উচিত, নাইট্রোজেনের সাথে মিশ্রণ খুবই ভালো।
Conclusion:
এভাবেই কলার খোসা দিয়ে সহজেই ঘরেই পুষ্টিকর সার তৈরি করে বাগানে ব্যবহার করে দেখতে পারেন! এটি গাছের বৃদ্ধি বাড়ায়, ফলন বাড়ায় এবং গাছকে কীটপতঙ্গ ও রোগ থেকে রক্ষা করে।
আর পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও কলার খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারে। ।
আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাদের উপকারী হবে। এই সাইটে আরও অনেক গাছপালা ও বাগান সম্পর্কিত আর্টিকেল রয়েছে। সেগুলো পড়ে জানুন গাছপালা ও বাগান সম্পর্কে নতুন নতুন জিনিস।