স্থলপদ্ম আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফুল গাছ। এটি দেখতে অনেকটা পদ্মের মতো, কিন্তু এটি জলে নয়, মাটিতে জন্মায়। স্থলপদ্মের ফুল বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন সাদা, লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা ইত্যাদি। স্থলপদ্মের ফুল খুব সুন্দর এবং মনোরম। এটি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আজ আমরা শিখব সহজেই কিভাবে স্থলপদ্ম গাছ আমাদের বাগানে লাগানো যায়।
স্থলপদ্ম গাছ সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য:
- স্থলপদ্মের আদি নিবাস চীন। স্থলপদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম হল Hibiscus mutabilis। এই গাছটি চীনে প্রায় 5000 বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে।
- স্থলপদ্মের ফুলের রং গোলাপি, লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ইত্যাদি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গোলাপি এবং লাল রঙের ফুল।
- স্থলপদ্মের ফুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি দিনের বেলায় রং পরিবর্তন করে। সকালবেলায় ফুলের রং গোলাপি বা সাদা হয়, আর বিকেলে লালচে রঙের হয়ে যায়। এই কারণেই স্থলপদ্মের ইংরেজি নাম হল “চেঞ্জেবল রোজ”, যার অর্থ “পরিবর্তনশীল গোলাপ”।
- স্থলপদ্মের ফুলের সুবাস হালকা। ফুলের পাপড়িগুলো খুব পাতলা এবং নরম হয়।
- স্থলপদ্মের ফুল শরৎকাল থেকে শীতের প্রথমভাগ পর্যন্ত ফোটে। এই সময়ে গাছে প্রচুর ফুল ফোটে।
- স্থলপদ্মের ফুলের পাপড়ি খেতে সুস্বাদু। ফুলের পাপড়ি দিয়ে বড়া বা পিঠা তৈরি করা হয়।
- স্থলপদ্ম কলমে চাষ করা হয়। স্থলপদ্মের ডাল কেটে পুঁতে দিলেই নতুন গাছ হয়।
- স্থলপদ্মের গাছ খুব দ্রুত বাড়ে। নিয়মিত যত্ন নিলে স্থলপদ্মের গাছ 3 থেকে 4 মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি: কিভাবে সহজে বাড়িতেই ঢেঁড়স চাষ করবেন
স্থলপদ্ম গাছের উপকারিতা:
স্থলপদ্ম গাছের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- সৌন্দর্য বৃদ্ধি: স্থলপদ্ম একটি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ফুল। এটি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ওষুধি গুণ: স্থলপদ্মের ফুল, পাতা এবং মূলের কিছু ওষুধি গুণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাত-ব্যথা, মুখের ঘা, শ্বেতী রোগ ও অনিদ্রায় উপকারিতা।
- খাদ্য হিসেবে: স্থলপদ্মের ফুলের পাপড়ি খেতে সুস্বাদু। এটি বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহার করা হয়। স্থলপদ্মের ফুলের পাপড়ি দিয়ে বড়া, পিঠা, চাটনি, সালাদ ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
- বাত-ব্যথা: স্থলপদ্মের ফুলের রস বাত-ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
- মুখের ঘা: স্থলপদ্মের ফুলের রস মুখের ঘা সারাত্তে সাহায্য করে।
- শ্বেতী রোগ: স্থলপদ্মের মূলের রস শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- অনিদ্রা: স্থলপদ্মের ফুলের রস অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
স্থলপদ্ম গাছের পরিচর্যা
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
চারা নেওয়ার সময় যা খেয়াল রাখবেন | গাছটি যেন পুষ্ট, সতেজ হয়, ১-১.৫ ফুট লম্বা হয়, ৩-৪টি ডাল থাকে, প্রতিটি ডালে সবুজ পাতা থাকে |
উপযুক্ত মাটির মিশ্রণ | ১ ভাগ এঁটেল মাটি, ১ ভাগ বালি, ১ ভাগ কম্পোস্ট/খামার সার, ১ ভাগ কোকোপিট + নিমখোল ও হাড়গুঁড়ো |
টবের আকার | কমপক্ষে ১০ ইঞ্চি |
চারা লাগানোর পদ্ধতি | মাঝখানে গর্ত করে এপসম সল্ট দিয়ে চারা বসানো |
রোদের পরিমাণ | ৪-৫ ঘন্টা প্রত্যক্ষ রোদ চাই |
জলের পরিমাণ | শুধু মাটি শুকিয়ে গেলেই জল দেবেন |
খাদ্য | ১৫ দিন অন্তরে সরষের খোল/কৃষিখাদ/কম্পোস্ট |
প্রুনিং | ডগা ফুটার পর কাটতে হবে, বছরে ২বার হার্ড প্রুনিং |
রোগ-কীট প্রতিরোধ | মিলিবাগ ও মাইটের জন্য কীটনাশক স্প্রে |
রিপটিং | মূল বাউন্ড হলে বড় পাত্রে রিপটিং করবেন |
উপযুক্ত স্থান নির্বাচন
স্থলপদ্ম গাছ পূর্ণ আলো খুব পছন্দ করে। এজন্য বাগানের যে স্থানটিতে সারাদিন সূর্যের আলো পড়ে, সেই স্থানে এটি লাগানো উত্তম। সাধারণত বাগানের দক্ষিণ পশ্চিম কোণ বা পূর্ব দিকের স্থান এর জন্য আদর্শ। যাতে সারাদিন সূর্যের আলো প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
মাটি প্রস্তুতি
স্থলপদ্ম গাছ হালকা, পোক্ত মাটি বেশি পছন্দ করে। এজন্য এক ভাগ বালি, এক ভাগ কোকোপিট এবং দুই ভাগ এঁটেল মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। এতে মাটিতে পোক্ততা থাকবে এবং মাটিও হালকা হবে।
প্রতিস্থাপন
স্থলপদ্মের জন্য কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাত্রে চারা লাগাতে হবে। ছোট পাত্রে লাগালে শীঘ্রই মুল বেরিয়ে আসবে। চারার নিচে কিছুটা সার দেওয়াও ভালো। এতে চারার পুষ্টি হয়।
জল
স্থলপদ্ম গাছ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল পছন্দ করে না। শুধু মাটি শুকনো হলেই জল দিতে হবে। অতিরিক্ত জল দেওয়া এড়াতে হবে। ভালো ফুল পাওয়ার জন্য এটা জরুরি।
সার
লাগানোর ১৫ দিন পর থেকে গাছে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ দরকার। কৃষিখাদ, কম্পোস্ট বা সরষের খোলের জল ১৫ দিন পর পর দিতে হবে। এতে গাছ ভালোভাবে বাঁচবে এবং পুষ্টি পাবে।
প্রুনিং
সময় সময় গাছের অতিরিক্ত শাখা কেটে ফেলে সঠিক আকারে রাখতে হবে। বছরে কমপক্ষে দুইবার হার্ড প্রুনিং করা দরকার। এতে গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
রোগ-কীটপতঙ্গ নিরাময়
মিলিবাগ ও মাইট থেকে রক্ষার জন্য সময় সময় কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য রোগ-কীট থেকেও রক্ষা করা দরকার।
কিভাবে বাড়িতে অ্যাডেনিয়াম বা মরু গোলাপ লাগাবেন এবং কিভাবে তার যত্ন নেবেন
রিপটিং
গাছ বড় হয়ে যাওয়ার পর বড় পাত্রে রিপটিং করে নতুন মাটি দিতে হবে। এতে গাছের জীবন বাড়ানো যায় এবং ভালো ফুলের জন্য এটা জরুরি।
আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার স্থলপদ্ম গাছ লাগানো ও তার যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে ধারণা হয়েছে। অন্যান্যদের সাথে এই তথ্য শেয়ার করুন এবং আমাদের ওয়েবসাইটে আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট খুঁজে নিন। সবার জন্য ধন্যবাদ!