বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি: জানুন কিভাবে সহজেই বাড়িতে প্রচুর বেলি ফুল পেতে পারেন

আমাদের দেশে বেলি ফুলের চাহিদা বরাবরই বেশি। বেলি ফুল তাদের সৌন্দর্য এবং সুবাসের সকলেরই প্রিয়। কিন্তু সবসময় বেলি ফুল কেনা বেশ খরচসাপেক্ষ হতে পারে। আপনি কি জানেন যে আপনি আপনার নিজের বাড়িতে বেলি ফুল চাষ করতে পারেন?

আজ আমরা বেলি ফুল কিভাবে বাড়িতেই চাষ করা যায় তা ধাপে ধাপে শিখব। কিভাবে বেলি ফুলের চারা বা কলম তৈরি করতে হয়, সেগুলিকে কোথায় রোপণ করতে হয় এবং তাদের কিভাবে যত্ন করতে হয় সবকিছুই আমরা এই পোস্টে কভার করব।

বেলি ফুল চাষ করা একটি সহজ কাজ। আপনি যদি কিছু মৌলিক বিষয়গুলি অনুসরণ করেন তবে আপনি সহজেই আপনার নিজের বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে বেলি ফুল পাবেন।

কিভাবে টবে গোলাপ চাষ করবেন -সম্পূর্ণ গাইড

বেলি ফুল জাত সমূহ

বেলি ফুল জাত

বেলি ফুলের মূলত তিন ধরনের জাত রয়েছে:

  • সিঙ্গল: এটি সাধারণত ছোট আকারের। এর গন্ধ অন্য জাতের চেয়ে বেশি।
  • ডাবল: এটি মাঝারি আকারের। একই গাছে একসাথে দুই রকম রঙের ফুল ফোটে।
  • বৃহৎ ডাবল: এটি সবচেয়ে বড় আকারের। একই গাছে একসাথে দুই রঙের ফুল ফোটে। এর ফুলের আয়ুষ্কাল অন্য জাতের চেয়ে বেশি।

বেলি ফুলের বংশবিস্তারণ পদ্ধতি

বেলি ফুলের বংশবিস্তারণ মূলত তিনটি পদ্ধতিতে করা হয়:

  • গুটি কলম
  • দাবা কলম
  • ডাল কলম

কলম বা চারা তৈরি:

  • চারা তৈরি করতে গ্রীষ্মের শেষ হতে থাকতে হবে বর্ষার শেষে বা বৃষ্টি সময়ে।
  • চারা লাগানোর জন্য গর্ত খুঁড়ে, জৈব সার ও কাঠের ছাই গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।
  • চারা লাগানোর জন্য সমান দূরত্বে প্রত্যেক গর্তে বেলির কলম বসাতে হবে। চারা থেকে চারা ও সারি থেকে সারির দূরত্ব কমপক্ষে ৫০ সেমি হওয়া বাঞ্ছনীয়।

গাঁদা ফুলের চাষ পদ্ধতি- কিভাবে বাড়িতে গাঁদা ফুলের যত্ন করবেন

বেলি ফুল চাষের উপযুক্ত মাটি

বেলি ফুল চাষের উপযুক্ত মাটি

বেলি ফুল চাষের জন্য সব ধরনের মাটিই উপযুক্ত। তবে ভারী এবং আবর্জনাযুক্ত মাটি এড়িয়ে চলা উচিত। সারাবছর জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকা দরকার। জমি চাষযোগ্য করার জন্য ৪-৫ বার চাষ করে জমিকে মসৃণ করতে হবে।

বেলি ফুলের চারারোপণ

বেলি ফুলের চারা রোপণের সঠিক সময় হল বর্ষার শেষাংশ থেকে শীতের শুরু। চারার মধ্যে মধ্যে ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হবে। প্রতিটি চারার জন্য গভীরতা ৩০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৩০ সেন্টিমিটার এর গর্ত খনন করতে হবে।

গর্তে প্রথমে কয়লার ছাই, ক্ষতিকৃত কাঠ এবং কম্পোস্ট মিশিয়ে পূরণ করতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে মাটি চাপাতে হবে। সারা বছরই চারারোপণ করা যেতে পারে, তবে বর্ষার পর চারারোপণ করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

টবে ফুল গাছ লাগানোর নিয়ম: কিভাবে টবে ফুল গাছের পরিচর্যা ও যত্ন করবেন

বেলি ফুলের পরিচর্যা

বেলি ফুল চাষে সঠিকভাবে পরিচর্যা করলেই ভালো ফসল পাওয়া যায়। পরিচর্যায় বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার –

সেচার ব্যবস্থা

বেলি ফুলের চাষে সবসময় জমিতে পর্যাপ্ত জল রাখতে হবে। গ্রীষ্মকালে ১০-১২ দিন পর পর, শীতকালে ১৫-২০ দিন পর পর এবং বর্ষাকালে প্রয়োজনে সেচ দেওয়া উচিত।

আগাছা নিয়ন্ত্রণ

আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করে জমিকে পরিষ্কার রাখতে হবে। আগাছাগুলো কুচি দিয়ে কেটে জমিতে গিয়ে দিলে সেচের প্রয়োজন কমে যায়।

ছাঁটাই

প্রতি বছরই শীতকালে বেলি ফুলের গাছের অতিরিক্ত ডালপালা ছাঁটিয়ে ফেলতে হবে। মাটির উপর থেকে ৩০ সেন্টিমিটার উপরের অংশ ছাঁটানো যায়।

রোগ ও কীট নিয়ন্ত্রণ

বেলি ফুলে মূলত দুই ধরনের রোগের আক্রমণ হতে পারে –

  • মাকড় আক্রমণ – এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে গন্ধকযুক্ত ঔষধ ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • ছত্রাক রোগ – এর ক্ষতি কমাতে ট্রেসেল বা এগ্রোসান ঔষধ ছিটিয়ে দিতে হবে।

ফলন

সাধারণত বেলি ফুল গাছ ৫-৬ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। এরপর গাছটি কেটে ফেলে নতুন চারা লাগানো হয়। প্রতি বছরই ফলন বৃদ্ধি পায়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি গাছ থেকে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়।

সংক্ষিপ্তসার

এই পোষ্টে আমরা বেলি ফুল গাছের যত্ন নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ আলোচনা করেছি । এবং এই বিষয়ে আরও জানতে আমাদের সাইটের অন্যান্য পোস্টগুলি পড়ে দেখুন। তথ্যগুলি ভালো লেগে থাকলে তা অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।