টবে শিউলি ফুলের চাষ

শিউলি ফুল (Night-flowering Jasmine) বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফুল। এর মোহনীয় গন্ধ ও সাদা-কমলা রঙের সমন্বয় সবাইকে মুগ্ধ করে। আজ আমরা জানব কীভাবে আপনি নিজের বাড়ির বা বারান্দায় টবে শিউলি ফুলের চাষ করতে পারেন।

শিউলি গাছের বংশবিস্তার পদ্ধতি:

শিউলি ফুল দুই প্রকার পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা সম্ভব।

  1. বীজ থেকে,
  2. কাটিং পদ্ধতিতে।

বীজ থেকে গাছ গড়ে তোলা সময়সাপেক্ষ হলেও ফলন ভালই হয়, অন্যদিকে, কাটিং পদ্ধতি হল দ্রুত এবং সহজ। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্তবয়স্ক গাছের একটি সুস্থ ডাল কেটে নতুন টবে রোপণ করা হয়, যাতে দ্রুত মূল গজায় এবং নতুন গাছ তৈরি হয়।

শিউলি ফুলের চাষের জন্য আপনি বীজ অথবা ছোট চারা যেকোনো একটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। এগুলি আপনি সহজেই স্থানীয় নার্সারি অথবা অনলাইন উদ্ভিদ বিক্রেতাদের কাছে পেয়ে যাবেন।

টবে গাঁদা ফুলের চাষের 10 টি টিপস

জলবায়ু

শিউলি গাছের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুই আদর্শ । অতিরিক্ত শীত বা অতিরিক্ত গাছের ক্ষতি করতে পারে। আপনি যদি ঠাণ্ডা আবহাওয়ার অধিবাসী হন, তবে গাছটিকে গ্রীনহাউস বা ঘরের ভেতর রাখুন।

টবে শিউলি ফুলের চাষ

টব

টবে শিউলি গাছ লাগানোর জন্য মাঝারি আকারের টব নির্বাচন করুন। সাধারণতঃ ২৫ সেমি উচ্চতার টব হলে ভাল হয়। তবে খেয়াল রাখবেন যেন টবের তলায় জল নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ছিদ্র থাকে।

মাটি

যে কোনও মাটিতেই শিউলি গাছ জন্মায়। তবে ভাল চাষের জন্য দোঁয়াশ মাটি হলে ভাল হয়। আপনি যদি টবে শিউলি চাষ করতে চান তাহলে প্রথমেই যেটি করবেন, পরিমান মতো দো-আঁশ বা বেলে মাটি, এর সাথে অল্প লাল সিলেকশন বালি, এমুঠো হাঁড়ের গুঁড়ো, দু’মুঠো ছাই মিশিয়ে নিন। এতে টবের মাটি ভাল থাকবে।

এর সঙ্গে কিছুটা পরিমান পাতা পচা সার, গোবর, খৈল ও কিছুটা টিএসপি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করলে ভাল হয়।

টবে শিউলি ফুলের গাছ লাগানোর পদ্ধতি

গাছ বসানোর আগে টবের নিচে ছিদ্র থাকলে তা খোলামকুচি দিয়ে ঢেকে দিন। তারপর টবে কিছুটা ইটের টুকরো বা নুড়িপাথর বা স্টোনচিপস দিতে হবে।

এবার কিছুটা বালি দিন যাতে নিচের টুকরোগুলো ঢেকে যায়। এই বালি উপরের মাটিকে নিচে ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যেতে বাধা দেবে।

এবার বালির উপর আগের তৈরী মাটির মিশ্রণ দিয়ে গাছ বসিয়ে দিন।এবং গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে ভালো করে চেপে দিন।

সবশেষে, টবের চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিন।

কিভাবে সহজেই বাড়িতে প্রচুর বেলি ফুল পেতে পারেন

শিউলি গাছের পরিচর্যা

সার

এপ্রিল মাসের শেষে বীজ পুঁতলে বর্ষাকালের শেষে ফুল পাওয়া যায়। সার হিসেবে চাপান সার বা লিকুইড সার দিতে হবে।

গোবর সার, চাপান সার ও লিকুইড সার শিউলি গাছের জন্য ভাল। নিমের গুড়ো খোল, কাঠের ভষ্ম, গুঁড়ো হাড়, ও গোবড় সার মিশিয়ে চাপান সার তৈরী করুণ। বর্ষাকাল থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত লিকুইড সার দিতে হবে।

জল

শিউলি গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন যাতে গোড়ায় জল না জমে। মাসে দুবার খুরপি দিয়ে মাটি খুঁচিয়ে দিন। মাটি যদি কোনো কারণে স্যাঁতস্যাঁতে হয়, তাহলে কলি ঝরে যাবে।

মাটি সবসময় হালকা ভিজা রাখুন, কিন্তু অতিরিক্ত জল দেয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত জল গাছের মূলে পচন ধরাতে পারে।

শিউলি গাছের পরিচর্যা

ডাল ছাঁটাই

শিউলি গাছের স্বাস্থ্য ও আকার নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাল ছাঁটাই অত্যন্ত জরুরী। নিয়মিত ছাঁটাই গাছের আকার এবং পোষণের সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করে এবং গাছকে আরো বেশি ফুল ফোটাতে উৎসাহিত করে।

সাধারণতঃ বসন্তের শুরুতে, একবার সিজনের ফুল দেওয়া শেষ হয়ে গেলে গাছের শুকনো ও রোগাক্রান্ত ডাল ছেটে ফেলুন।

এরপর কয়েকদিন পর কান্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে, তাদের মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকীগুলি ছিড়ে ফেলুন। এরপর গাছের গোড়ায় মাটি দিন। সতেজ গাছ রাখতে হলে একটি সোজা শাখা ও ৪-৫ টি পার্শ্ব শাখা রাখতে হবে।

গাছের পার্শ্ব কুঁড়িগুলি ছাটলে, অনেক ফুল হবে। বেশী ফুল পেতে হলে গাছের আগাগুলি ভেঙ্গে দিন। এতে গাছ আরো বেশী ঝাঁকড়ানো হবে।

ছায়াযুক্ত স্থানের জন্য আদর্শ গাছ

পোকামাকড়

সুগন্ধি ফুলের গাছ হওয়ায় শিউলি গাছে কিন্তু মাঝে মাঝে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়। বিশেষ করে শুঁয়োপোকা। এরা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কয়েক দিন পরপর নিমতেল গাছের উপর স্প্রে করলেই এই সমস্যা কাটানো যায়।

তবে শুঁয়োপোকা এতে দমন হয় না। শুঁয়োপোকা আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অনেকেই রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। তবে আমরা এই পদ্ধতি সমর্থন করি না এতে পরিবেশের প্রভূত ক্ষতি হয়। এর বদলে, যে পাতার তলায় প্রজাপতি ডিম পাড়বে সেটিকে ছিঁড়ে ফেলুন। এতে শুঁয়োপোকার আক্রমণ অনেকটাই কমানো যায়।

Leave a Comment