টবে গাছ লাগানোর নিয়ম নীতি

বাগান করা মানুষের একটি প্রাচীন শখ। এটি মানুষকে প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ঠ করে তোলে এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে। কিন্তু অনেকেই বাগান করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পান না। তাদের জন্য কন্টেইনার গার্ডেনিং বা টবে গাছ লাগানো একটি দুর্দান্ত বিকল্প।

কন্টেইনার গার্ডেনিং হলো ছোট ছোট টবে গাছ লাগানোর বিদ্যা। এর সবথেকে মজার ব্যাপার হলো এতে বাগান করার জন্য বেশি জায়গার দরকার হয় না। বাড়ির সামনে বাগান করার জায়গা না থাকলেও এক চিলতে বারান্দাতেই সাজিয়ে নিতে পারেন স্বপ্নের বাগান।

টবে গাছ লাগানো খুবই সহজ এবং প্রায় যেকোনো জায়গাতেই করা যায়। আপনি আপনার বারান্দা, ছাদ, বা এমনকি আপনার জানালায় কন্টেইনার গার্ডেনিং করতে পারেন।

আজ এই পোস্টে, আমি টবে গাছ লাগানোর নিয়ম নীতি সম্বন্ধে আলোচনা করবো। পোস্টটি ফলো করলেই বুঝতে পারবেন কত সহজেই আপনি নিজের জন্য একটি সুসজ্জিত বাগান তৈরী করে ফেলতে পারেন টবে গাছ লাগানো কত সহজ এবং ইন্টারেষ্টিং একটি পদ্ধতি!

টবে গাছ লাগানোর সুবিধা

টবে গাছ লাগানোর অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমন:

  • এটি সহজ এবং সাশ্রয়ী। টবে গাছ লাগানোর জন্য আপনাকে কোনো ধরনের বিশেষ সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি কেনার দরকার নেই। আপনি সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আপনি আপনার স্থানীয় নার্সারী দোকানে বা অনলাইনেই খুঁজে পেয়ে যাবেন।
  • এটি আপনাকে যেকোনো জায়গায় বাগান করতে দেয়। আপনি আপনার বারান্দা, ছাদ, বা এমনকি আপনার জানালায় কন্টেইনার গার্ডেনিং করতে পারেন। এটি আপনাকে বাগান করার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করে।
  • এটি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগানোর সুযোগ করে দেয়। আপনি টবের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি, ভেষজ, ফুল, এবং এমনকি বৃক্ষ জাতীয় গাছও লাগাতে পারেন।
  • টব আপনাকে আপনার নিজের খাদ্য উৎপাদন করতে দেয়। টবে গাছ লাগানোর মাধ্যমে আপনি আপনার নিজের তাজা, পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন। এতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে।
  • কন্টেইনার গার্ডেনিং আপনাকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে সাহায্য করে এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে আপনাকে সুস্থ রাখে।

কিভাবে টব বাছাই করবেন?

টবে গাছ লাগানো শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি টব বেছে নিতে হবে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের টব পছন্দ করেন। আপনি কাদামাটি, কাঠ, প্লাস্টিক বা ধাতু থেকে প্রায় সবকিছুই ব্যবহার করতে পারেন। তবে নিশ্চিত করুন যে টবটিতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে:

প্রথমত, টবটি যথেষ্ট বড় হওয়া চাই যাতে তা গাছের পূর্ণ বৃদ্ধি সাপোর্ট করতে পারে। যদি তা খুব ছোট হয়, তাহলে গাছপালাগুলির শিকড় সঠিকভাবে বৃদ্ধি পাবে না এবং গাছও ভালভাবে বাড়তে পাড়বে না।

এটি অবশ্যই এমন উপাদান দিয়ে তৈরি হতে হবে যা মাটি/পাত্রের মিশ্রণকে ধরে রাখতে পারে। তা হলে মাটি/পাত্রের মিশ্রণ টবের বাইরে বেরিয়ে যাবে এবং গাছগুলি ও মারা যাবে।

টবটি একদম নিশ্ছিদ্র হলেও চলবে না টবটির নীচে কিছু ছোট গর্ত থাকতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশিত হতে পারে। যদি টবটিতে কোনও নিষ্কাশন গর্ত না থাকে, তাহলে টবটিতে জল জমা হবে এবং গাছ পচে যাবে।

টবটিতে যেন কোনও বিষাক্ত পদার্থ না থাকে। কখনো কখনো কিছু টবে বিষাক্ত রঙ বা রাসায়নিক থেকে যায় যা গাছপালার ক্ষতি করতে পারে। এইরকম পাত্র সবসময় এড়িয়ে চলুন।

এই ধরণের স্ট্র্যাপ হ্যান্ডেলযুক্ত ফ্যাব্রিক গ্রো ব্যাগ রোপণ এবং নার্সারি গার্ডেনের জন্য আদর্শ।

টবের জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচন

টবের জন্য সবথেকে ভালো গাছ হলো নানা ধরণের সিসনাল ফুল। বছরের প্রত্যেক মরশুমেই কিছু কিছু ফুলের গাছ লাগান এতে আপনি সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

বারান্দায় গোলাপ, গাঁদা, বেলি, অপরাজিতা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, নয়নতারা, গন্ধরাজ গাছ লাগাতে পারেন। বাড়িতে বড় ছাদ থাকলে, বড় বা মাঝারি গাছ যেমন হাসনাহেনা, জুঁই, বাগানবিলাস, টগর, জবা বা শিউলি ফুল গাছ লাগাতে পারেন।

ফুল ছাড়াও ফলের গাছও টবের জন্য খুব ভালো একটি অপশন। বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় বা ছাদে পেয়ারা, আমলকী, জাম্বুরা, ট্রবেরি, ডালিম, লেবু, ইত্যাদি খুব সহজেই চাষ করতে পারেন।

টবে আপনি কোন গাছ লাগাতে পারবেন তা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার টবটি কোথায় রাখবেন এবং সেখানে কতটা সূর্যের আলো পরে তার উপর।

যদি আপনার টবটি এমন জায়গায় রাখতে পারেন যেখানে তা পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়, তাহলে আপনি বিভিন্ন ধরণের গাছপালা চাষ করতে পারবেন, যেমন:

  • ফুল, যেমন পলাশ, বেলি, গাঁদা ইত্যাদি।
  • শাকসবজি, যেমন টমেটো, লঙ্কা, শসা ইত্যাদি।
  • ফল, যেমন আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ইত্যাদি।

অন্যদিকে যদি টবটি ছায়াযুক্ত স্থানে থাকে, তাহলে আপনি শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট ধরণের গাছপালাই চাষ করতে পারবেন , যেমন:

  • পাতাযুক্ত সবজি, যেমন পালং শাক, ধনেপাতা, পুদিনা ইত্যাদি।
  • শিকড়ের ফসল, যেমন আলু, গাজর, বিট ইত্যাদি।

গাছপালা নির্বাচনের সময় তাদের আকার এবং বৃদ্ধির হারও বিবেচনা করুন। আপনি যদি একটি ছোট টবে গাছ লাগাতে চান , তাহলে আপনাকে ছোট গাছপালাই বেছে নিতে হবে। বড় বৃক্ষজাতীয় গাছ ছোটো টবে বেশিদিন বাঁচে না।

টবে লাগানো যায় এমন 70টিরও বেশী গাছের তালিকা

টবে জল দেওয়ার নিয়ম:

টবের গাছে জল দেওয়াটা সাধারণ বাগানে গাছ জল দেওয়ার থেকে কিছুটা আলাদা।

টবে বাগানের তুলনায় অনেক অল্প মাটি থাকে, তাই এটি খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও , টবে পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার দরুন গাছের কাছে জলের আলাদা কোনো উৎস থাকে না।

তাই , আপনাকে প্রতিদিন বা এমনকি কখনো কখনো দিনে দুবারও গাছ জল দিতে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন যে মাটি আর্দ্র থাকলে জল দেওয়ার দরকার নেই। মাটি ক্রমাগত ভেজা থাকলে শিকড় পচে যেতে পারে, বিশেষত যদি আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে।

জল দেয়ার সময় টবটি থেকে যতক্ষণ না জল নিষ্কাশন ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে ততক্ষণ জল দিন। টব যত ছোট হবে তত বেশি ঘন ঘন জল দিতে হবে।

মাটির টবে প্লাস্টিক বা ধাতব টবের থেকে বেশি ঘন ঘন জল দিতে হতে পারে। কারণ মাটির টবগুলি থেকে বাষ্পীভবন হয়।

নিচের স্টেপস গুলি ফলো করে আপনি আপনার জল দেওয়ার পরিশ্রম অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন:

  • মালচ ব্যবহার করুন।
  • বায়ুপ্রবাহ রোধক স্থাপন করুন।
  • একটি স্বয়ং-জলসেচন ব্যবস্থা ব্যবহার করুন।
  • একাধিক টব একসাথে পাশাপাশি রাখুন, এতে মাটি থেকে বাষ্পীভবন কমে যায়।

আমরা আশা করি এই পোস্ট টবে গাছের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আপনাকে যথেষ্ট সাহায্য করতে পেরেছে। পোস্টটি আপনার যেকোনো পরিচিতের সাথে শেয়ার করুন এবং সেইসঙ্গে আরও নিউজ এবং টিপস পাওয়ার জন্য এই সাইটের অন্যান্য পোস্টগুলি পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।