বন্ধুগণ, ছাদে গাছ লাগানোর একটা আলাদাই মজা আছে। আমাদের অধিকাংশের বাড়িতে ছাদ থাকলেও অনেকেই জানি না সেখানে কিভাবে একটা ছোট্ট উদ্যান তৈরি করা যায়। অনেকেই মনে করেন, ছাদে গাছ লাগাতে অনেক খরচ হয় এবং পরিচর্যা করাও খুব কঠিন। তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও যত্ন নিলে ছাদে খুব সহজেই একটি সুন্দর ফল বা সবজির বাগান তৈরি করা সম্ভব।
আজ এই পোস্টে, আমরা ছাদে কিভাবে বাগান করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করব। এই টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনিও আপনার ছাদে একটি সুন্দর বাগান তৈরি করতে পারবেন।
তাহলে আর দেরি কি? এখনই পোস্টটি পড়ে নিন এবং শুরু করে দিন আপনার ছাদে বাগান করার কাজ!
ছাদ বাগানে কোন গাছ লাগানো যায়
ছাদ বাগানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গাছ বাছাই। জেনে, বুঝে, বিশ্বস্ত নার্সারি, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে গাছ সংগ্রহ করতে হবে।
ছাদ বাগানের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছটি বড় আকারের না হয়। অর্থাৎ ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগানো যেতে পারে।
- ফলের গাছ – আম্রপালি, পেয়ারা, আপেল কুল, জলপাই, করমচা ইত্যাদি
- সবজির গাছ – পেঁপে, মির্চি, পাতালুটি ইত্যাদি
- ফুলের গাছ – গোলাপ, চন্দন, ফুলকলি ইত্যাদি
টবে কি কি গাছ লাগানো যায়: 70+গাছের তালিকা
ছাদে কোন কোন ফলের গাছ লাগানো যায়
আম
আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের আম ছাদে লাগানো যায়। টবে আমের মধ্যে আম্রপালি, আলফানসো, বেঁটে প্রজাতির বারোমেসে, লতা, ফিলিপাইনের সুপার সুইট, রাঙ্গু আই চাষ করা যেতে পারে।
লেবু
লেবুর মধ্যে কাগজিলেবু, কমলা, মালটা, নারকেলি লেবু, কামকোয়াট, ইরানিলেবু, বাতাবিলেবু (অ্যাসেম্বল) টবে খুবই ভালো হয়।
অন্যান্য
কলমের জলপাই, থাইল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, কলমের শরিফা, কলমের কদবেল, ডালিম, স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলকুল, লিচু ইত্যাদি।
বাহারি পাতার জামরুল, পেয়ারা, সফেদা গাছও বিভিন্ন নার্সারিতে এখন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
কোন ধরনের প্রস্তুতি লাগবে
টব
টব হল ছাদে গাছ লাগানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়। টবগুলো বিভিন্ন আকারে ও মাপে পাওয়া যায়, তাই আপনি আপনার বাগানের জন্য উপযুক্ত টব বেছে নিতে পারেন।
টবের সুবিধা হল এগুলো সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো যায়। এটি একটি বড় সুবিধা, কারণ ছাদে গাছ লাগানোর সময় মাটির ওজন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টবে গাছ লাগানোর সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:
- টবের আকার গাছের আকার অনুযায়ী হতে হবে।
- টবের নিচে ছিদ্র থাকা উচিত যাতে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
- টবের মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকা উচিত।
হাফ ড্রাম
হাফ ড্রাম টবের একটি বড় সংস্করণ। এতে বড় জাতের গাছ এবং ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। হাফ ড্রাম তৈরি করতে বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করে নিতে হয়। হাফ ড্রামে গাছ লাগানোর সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:
- হাফ ড্রামের নিচে ছিদ্র থাকা উচিত যাতে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
- হাফ ড্রামের মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকা উচিত।
চৌবাচ্চা
ছাদের ওপর এক থেকে দেড় ফুট উঁচু এবং তিন থেকে চারটি পিলারের ওপর জলের ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চা আকারের রিং স্লাব বসিয়ে গাছ লাগানো যেতে পারে। চৌবাচ্চা তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন সিমেন্ট, ইট, বা কাঠ।
চৌবাচ্চায় গাছ লাগানোর সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:
- চৌবাচ্চার নিচে ছিদ্র থাকা উচিত যাতে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
- চৌবাচ্চার মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকা উচিত।
স্থায়ী বেড
ছাদের কোনো অংশে স্থায়ী বাগান করতে চাইলে সুবিধামতো আকারের স্থায়ী বেড তৈরি করা যায়। স্থায়ী বেড তৈরি করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
- ছাদে একটি উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করুন।
- বেডের আকার নির্ধারণ করুন।
- বেডের তলদেশে ইট বা পাথর বিছিয়ে দিন।
- বেডের মাঝখানে মাটি ভর্তি করুন।
- গাছ লাগান।
স্থায়ী বেড তৈরি করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:
- বেডের আকার ছাদের ওজন সহ্য করার মতো হতে হবে।
- বেডের মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকা উচিত।
টবের গাছ লাগানোর কিছু টিপস
- গাছের আকারের সাথে মিলিয়ে টবের আকার নির্ধারণ করুন।
- টবের নিচে জল গড়িয়ে যাওয়ার জন্য ছিদ্র রাখুন।
- টব ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- ছোট আকারের চারা সংগ্রহ করুন।
- চারা গাছকে কোনোভাবেই আঘাত না দিয়ে সাবধানে টবে বসিয়ে দিন।
- টবের মাটিতে সার মিশিয়ে দিন।
গাছের রক্ষণাবেক্ষণ
- ছাদে গাছ লাগানোর সময় জল সেচের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। গাছের প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল সেচ না করলে গাছ শুকিয়ে যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে দিনে দুইবার জল দেওয়া উচিত। বর্ষাকালে জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে, বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে তা বের করে দিতে হবে।
- গাছের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। গাছের প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার প্রয়োগ না করলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। গাছের জন্য উপযুক্ত সার ব্যবহার করা উচিত। গাছের মূল থেকে ২ থেকে ৩ ফুট দূরে সার ছড়িয়ে দিতে হবে।
- গাছের চারপাশে আগাছা জন্মাতে দিলে গাছের বৃদ্ধিতে সমস্যা হতে পারে। তাই গাছের চারপাশ থেকে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করুন। আগাছা পরিষ্কার করার সময় গাছের গোড়ায় আঘাত না লাগিয়ে সাবধানে পরিষ্কার করতে হবে।
- ছাদে গাছ লাগানোর সময় পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা প্রয়োজন। গাছের পাতা ও ডালে পোকামাকড় বা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নিন। কীটপতঙ্গ লাগলে প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করুন। রোগ লাগলে সঠিক ঔষধ স্প্রে করা দরকার।
- ছাদ বাগানকে পরিষ্কার রাখতে হবে। শুকনো পাতা ও শাখাপালা সরিয়ে ফেলতে হবে।
- ঝড়-বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে গাছের চারপাশে বাঁধ দেওয়া যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ
ফলের গাছ হলে ফল পরিপক্ক হলেই তুলতে হবে। অপরিপক্ক ফল ঝড় দিয়ে নিতে হবে না। অপরিপক্ক ফল তুললে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফল পরিপক্ব হলে এর রঙ, আকার, গন্ধ এবং স্বাদ পরিবর্তিত হয়। এছাড়াও, ফলের গাছের পাতা ও ডালের রঙ পরিবর্তিত হয়।
ফলের গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখা উচিত:
- ফলের রঙ, আকার, গন্ধ এবং স্বাদ পরিবর্তিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
- ফলের গাছের পাতা ও ডালের রঙ পরিবর্তিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
- ফলটি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
ফুলের গাছ হলে ফুল ফোটার পর ২-৩ দিন অপেক্ষা করে তুলতে হবে। এটা গাছের জন্য ভালো। ফুল ফোটার পর ২-৩ দিন অপেক্ষা করলে ফুলের বীজ তৈরি হয়ে যায়। এতে গাছের পরবর্তী ফুল ফোটার হার বৃদ্ধি পায়।
ফুলের গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখা উচিত:
- ফুলটি সম্পূর্ণ ফোটে উঠেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
- ফুলের বীজ তৈরি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
- ফুলটি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
সবজির গাছ হলে প্রয়োজনের পরিমাণের বেশি সবজি কেটে নেওয়া উচিত নয়। সবজির গাছ থেকে অতিরিক্ত সবজি কেটে নিলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সবজির গাছ থেকে প্রয়োজনের পরিমাণের সবজি কেটে নিলে গাছ আবার নতুন করে সবজি তৈরি করতে পারে।
সবজির গাছ থেকে সবজি সংগ্রহ করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখা উচিত:
- সবজিটি সম্পূর্ণ পরিপক্ব হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
- সবজিটি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
- সবজিটি গাছ থেকে কেটে নেওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবহার করতে হবে।
সবজির বাগান বানান এই 5 টি সহজ ধাপে
শেষ কথা
আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ধারণা হয়েছে যে ছাদে বাগান করা এত কষ্টকর নয়, মাত্র কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই সহজেই সুন্দর একটা ছাদ বাগান তৈরি করা যায়। আশা করি আপনারা এই ধরনের ছাদ বাগান গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।
আরও তথ্যের জন্য আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। এবং এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন – তাদেরও হয়তো এর প্রয়োজন হতে পারে!