গাঁদা ফুল আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় শীতকালীন ফুল। তার সুন্দর রঙ এবং সুবাসে ঘরের উজ্জ্বলতা বাড়ানো যায়। তবে কি জানেন গাঁদা ফুল টবে চাষ করলে কেমন সহজেই পুষ্প উৎপাদন বাড়ানো যায়?
আজ আমরা শেখাব গাঁদা ফুলের চাষের সহজ পদ্ধতি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে নিজের বাড়িতে গাঁদা ফুলের গাছ তৈরি করা যায়।
টবে গাঁদা ফুলের চাষ পদ্ধতি
প্রজাতি ও চাষাবাদ
দেশে মোট ৫০ টি প্রজাতির গাঁদা চাষ করা হয়। এর মধ্যে প্রধান –
আফ্রিকান গাঁদা
গাঁদার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রজাতি হলো আফ্রিকান গাঁদা। এর গাছ খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এবং ৫০-১০০ সেমি পর্যন্ত উঁচু হয়। এর পাতা পক্ষাকারে সাজানো থাকে এবং পাতায় সূক্ষ্ম লোম থাকে। আফ্রিকান গাঁদার ফুল বড় আকারের এবং গোলাকার হয়। ফুলের রঙ হলুদ, কমলা, কমলা-লাল, বা সাদা হতে পারে। আফ্রিকান গাঁদা সাধারণত শীতকালে ফোটে।
ফরাসি গাঁদা
ফরাসি গাঁদা আফ্রিকান গাঁদার চেয়ে ছোট আকারের হয়। এর গাছ খাড়া বা ঝোপালো হতে পারে। এর পাতা মসৃণ হয় এবং ফুলের রঙ হলুদ, কমলা, বা কমলা-লাল হতে পারে। ফরাসি গাঁদা আফ্রিকান গাঁদার চেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময়। এর বিভিন্ন হাইব্রিড জাত পাওয়া যায়।
সিগন্যাটা
সিগন্যাটা গাঁদা একটি বিরল প্রজাতি। এর গাছ খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এবং ৫০-৭৫ সেমি পর্যন্ত উঁচু হয়। এর পাতা মসৃণ হয় এবং ফুলের রঙ হলুদ, কমলা, বা কমলা-লাল হতে পারে। সিগন্যাটা গাঁদার ফুলের কেন্দ্রে একটি কালো ডোরা থাকে।
মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত গাঁদা
মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত গাঁদা একটি আকর্ষণীয় প্রজাতি। এর গাছ ঝোপালো হয় এবং ২০-৩০ সেমি পর্যন্ত উঁচু হয়। এর পাতা মসৃণ হয় এবং ফুলের রঙ হলুদ, কমলা, বা কমলা-লাল হতে পারে। মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত গাঁদার ফুলের একটি মিষ্টি সুগন্ধ আছে।
এইভাবে সহজেই স্থলপদ্ম গাছের পরিচর্যা করুন
গাঁদা চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু
গাঁদা ফুলের জন্য উপযুক্ত জলবায়ু হল হালকা শীতল। এর জন্য ১৮-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি গরমে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফুলের আয়তন ও সংখ্যাও কমে যায়। খুব বেশী ঠান্ডায়ও গাছ ও ফুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাটি
গাঁদা বিভিন্ন ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে ফরাসি গাঁদা হালকা মাটিতে ভাল হয় যেখানে জল নিষ্কাশন ভাল। আফ্রিকান গাঁদা ভারী মাটিতে চাষ করা ভাল। পাত্রে চাষে তিন ভাগ দুই ভাগ মিশ্রণে গোবর মাটি দিতে হয়।
চাষের জমি প্রস্তুতি
চাষের জন্য, প্রথমে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। গাঁদা চাষের মাটি এমন হওয়া উচিত যাতে জল ভালোভাবে পাস্ করতে পারে মাটির ড্রেনেজ বাড়াতে কম্পোস্ট বা পারলাইট যোগ করতে পারেন। pH স্তর 6.0 থেকে 7.0 এর মধ্যে থাকা উচিত।
চাষের এলাকা পরিষ্কার করে একটি গার্ডেন ফর্ক বা টিলার দিয়ে মাটি হালকা করে খুঁড়ে ফেলুন। জমিতে থাকা ঢেলা, পাথর বা অপশিষ্ট ইত্যাদি জমির বাইরে ফেলে দিন। এর ফলে মেরিগোল্ড গাছের শিকড়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা তৈরি হবে।
মাটিতে বিভিন্ন জৈব পদার্থ যেমন, কম্পোস্ট বা গোবর সার মিশিয়ে মাটিকে আরও উর্বর করে তোলা যেতে পারে। মাটির কোয়ালিটি যদি খারাপ হয়, তাহলে সমতুল্য সার যোগ করে তাকে উর্বর করা যেতে পারে।
শেষে, একটি মাটির সারফেস সমতল করে চাষের এলাকা তৈরি করতে হবে।
বীজ দিয়ে বংশবিস্তার
গাঁদার বীজ দিয়ে বংশবিস্তার করা সহজ এবং ফলপ্রসু। বীজ থেকে গাছগুলো দারুণ বাড়ে এবং লম্বা হয়। বীজ বপনের ৫-৭ দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়। নার্সারিতে গ্রীষ্মে প্রতি হেক্টরে ২০০-৩০০ গ্রাম এবং শীতে ১৫০-২০০ গ্রাম বীজ লাগে।
গাঁদা ফুলের বীজ বপনের আদর্শ সময় হল নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস। এই সময় আবহাওয়া হালকা ঠান্ডা থাকে, যা গাঁদা ফুলের চারা গজানোর জন্য উপযুক্ত।
চারা রোপণ
গাঁদার চারা সহজেই রোপণ করা যায়। রোপণের সময় চারায় ৩-৫টি পাতা থাকতে হবে। খুব পুরোনো বা পাতলা চারা থেকে ভালো ফসল পাওয়া যায় না। চারাগুলো মাঝামাঝি দূরত্বে রোপণ করতে হবে। ফরাসি গাঁদার জন্য ৩০ সেমি x ৩০ সেমি এবং আফ্রিকান গাঁদার জন্য ৪০ সেমি x ৪০ সেমি দূরত্ব রাখা উচিত।
গাঁদা ফুল গাছের পরিচর্যা
সার
প্রতি হেক্টরে ২৪ টন গোবর সার মিশানো উচিত। NPK সারের পরিমাণ হবে ৪:৩:৩। অর্ধেক নাইট্রোজেনসহ বাকি অংশ বেসাল ডোজ হিসেবে দিতে হবে। বোরন এবং দস্তাও দেওয়া উচিত।
ভার্মি কম্পোস্ট কি? কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করার পদ্ধতি
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
বর্ষায় আগাছা নিয়ন্ত্রণ জরুরি। বারে বার হাতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, নহলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সেচ সিস্টেম
সাধারণতঃ সপ্তাহে অন্তত একবার গাছে জল দিতে হয়। জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যেন তা মাটিতে জমা না হয়ে থাকে। গ্রীষ্মে ৪-৫ দিন এবং শীতে ১০ দিন পর পর জল দেওয়া উচিত।
প্রুণিং
রোপণের ৩ সপ্তাহ পরে মাটি উল্টানো এবং আরেক সপ্তাহ পরে আবার করতে হবে। পাশের শাখা কাটে এবং মূল ডালপালা বাড়িয়ে গাছের আকার তৈরি করতে হবে। এতে ফুলের উৎপাদন বেড়ে যায়।
টবে ফুল গাছ লাগানোর নিয়ম: কিভাবে টবে ফুল গাছের পরিচর্যা ও যত্ন করবেন
ফুল তোলা
প্রতিস্থাপণের ৪০-৫০ দিন পর ফুল আসে
ফুল সংগ্রহ
- সকালে ফুল তোলা উচিত।
- ফুল পূর্ণরূপে পরিপক্ হলে তুলতে হবে।
- তোলার আগে সেচ দেওয়াটা ভালো।
- নিয়মিত ফুল তোলা এবং শুকনো ফুল কাটা উৎপাদন বাড়ায়।
- আলগা ফুলগুলো ঝুড়িতে এবং ডাঁটাযুক্ত ফুলগুলো গুছিয়ে বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
- প্রতি গাছ থেকে ১০০-১৫০টি ফুল পাওয়া যায়।
- ফুল দেওয়ার মৌসুম প্রায় ৩ মাস থাকে।
এভাবেই সহজ পদ্ধতিতে গাঁদা ফুলের চাষ করে উপকৃত হওয়া যায়।
শেষ কথা:
গাঁদা ফুল চাষের এই সহজ পদ্ধতি শেখার পর নিশ্চয়ই আপনিও চাইবেন নিজের বাড়িতে একটি গাঁদার টব গাছ রাখতে। তাহলে দেরি না করে শুরু করুন গাঁদা ফুল চাষ। আরও তথ্যের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট দেখুন।
আশা করি আপনারা এই পোস্টটি ভালো লেগেছে। অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাইটে আরও গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো পড়ুন।