কারি পাতা: শুধু রান্নার উপাদান নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী

কখনও কখনও সাধারণ কিছু জিনিসই আমাদের জীবনে বিপ্লব আনতে পারে। কারি পাতাও তার মধ্যে একটি – যা শুধু রান্নার রুচি বাড়ায় না, বরং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাংলার রান্নার যেসব মসলা আমরা খেয়ে বেড়ে উঠেছি, তাতে কারি পাতা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে হলে মা, বাইরে হলে রেস্টুরেন্ট – সব জায়গাতেই কারি পাতা ছিল রান্নার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তবে শুধু রান্নার উপাদান নয়, স্কারি পাতা বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী। কিন্তু আপনি কি জানেন, কারি পাতা দিয়ে চুলের যত্ন থেকে শুরু করে ওজন কমানো পর্যন্ত নানান রকম স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা যায়?

আজকের এই ব্লগ পোস্টে, আমরা কারি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও, কারি পাতা ব্যবহার করে কিভাবে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা যায়, সে সম্পর্কেও জানব।

আসুন জেনে নেওয়া যাক এই অদ্ভুত পাতার গল্প।

তুলসী গাছের উপকারিতা সম্বন্ধে না জানা কিছু তথ্য

কারি পাতা গাছ

কারি পাতা গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Murraya koenigii। ইংরেজিতে Curry Leaf বলে, কারণ এটি রান্নার কারি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

কারি পাতার অন্যান্য নাম রয়েছে:

  • হিন্দিতে: কাডি পাত্তা (Kadi Patta)
  • তেলুগুতে: কারিভেপাকু (Karivepaku)
  • কন্নড়ে: কারিবেবিনা সোপ্পু (Karibevina Soppu)
  • কঙ্কণিতে: নিম্বেহান্নু (Nimbehannu)
  • গুজরাটিতে: মিঠো লিম্বু (Mitho Limdo)
  • মারাঠীতে: মুর্রায়া (Murraya)
  • বাংলায়: বারসুঙ্গা (Barsunga)
  • তামিল এবং মালয়ালমে: কারি পাত্তা (Kari Patta)

এছাড়াও কিছু আঞ্চলিক নাম হলো – নরসিং পাতা, নিমভুত, মিস্টি নিম, ইত্যাদি।

মূলত এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি গাছ। ভারত ও শ্রীলঙ্কাতেই এর স্বদেশি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

কারি পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম Murraya koenigii

কারি পাতা চেনার উপায়

কারি পাতা গাছ মাঝারি উচ্চতার, প্রায় 5-6 মিটার উঁচু হয়। পাতাগুলো দেখতে অনেকটা নিম পাতার মতো, কিন্তু আকারে ছোট এবং ঘন ঘন।

পাতায় একধরনের সুবাস্প তৈরি করা তেলাকৃতি উপাদান থাকায়, সেই কারণে পাতা কুঁচকুচে এবং ঝালঝালে গন্ধযুক্ত।

ডালের শীর্ষে সাদা ফুল ফোটে, যার ফলের আকার নিমের মতো। কাচা অবস্থায় ফলটি সবুজ হলেও পরিপক্ক হলে লাল থেকে কালো হয়ে যায়।

কারি পাতা কি নিম পাতা?

না, কারি পাতা নিম পাতা নয়। কারি পাতা বৈজ্ঞানিক নাম হলো Murraya koenigii যা Rutaceae গোত্রের। নিম পাতা বৈজ্ঞানিক নাম হলো Azadirachta indica, যা Meliaceae গোত্রের। দুটি উদ্ভিদই ভিন্ন গোত্রে এবং ভিন্ন প্রজাতির।

কারি পাতা দেখতে নিম পাতার মতো হলেও এর স্বাদ ভিন্ন। কারি পাতায় একটি মিষ্টি এবং ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে, অন্যদিকে নিম পাতার স্বাদ তেতো। কারি পাতা সাধারণত ভারতীয় রান্নায় ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে নিম পাতা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ এবং ভেষজ পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

বৈশিষ্ট্যকারি পাতানিম পাতা
উদ্ভিদ প্রজাতিMurraya koenigiiAzadirachta indica
গোত্রRutaceaeMeliaceae
স্বাদমিষ্টি এবং ঝাঁঝালোতেতো
ব্যবহারভারতীয় রান্নাওষুধ এবং ভেষজ পণ্য
কারি পাতা vs নিম পাতা vs তেজপাতা

কারি পাতা কি তেজপাতা?

না, কারি পাতা তেজপাতা নয়। তেজপাতা হলো তেজপাতা গাছের শুকনো পাতা যা রান্নায় সুগন্ধ এবং স্বাদ যোগ করতে ব্যবহার করা হয়।

তেজপাতা সারা বিশ্বে রান্নায় ব্যবহৃত হয়, ভারতীয় থেকে ক্যারিবিয়ান রান্না পর্যন্ত। এটি খাবারের স্বাদে একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনে।

কারি পাতা, অন্যদিকে, একটি সবুজ পাতা যা মূলত ভারতীয় রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এটির স্বাদ তেজপাতার মতো নয়, এবং এটি খাবারে একটা মিষ্টি এবং ঝাঁঝালো গন্ধ যোগ করে। কারি পাতাও শুকনো করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, কিন্তু সবচেয়ে ভালো স্বাদের জন্য এটি তাজা ব্যবহার করা উচিত।

সুতরাং, না, কারি পাতা তেজপাতা নয়। এগুলি দুটি ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের পাতা, এবং এগুলোর স্বাদ এবং গন্ধও ভিন্ন।

কারি পাতার উপকারিতা

  • রান্নায় সুবাস্প মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়
  • দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতীয় রান্নায় অত্যন্ত জনপ্রিয়
  • পেটে গ্যাস তৈরী হতে বাধা দেয়
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
  • চুলের যত্নে সাহায্য করে
  • ত্বকের যত্নে সাহায্য করে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  • পেটের অসুখ দূর করে

কারি পাতার ব্যবহার

  • সবজি, মাছ, মাংস – সব রকম রান্নায় ব্যবহার হয়
  • তাজা অবস্থায় ব্যবহার করলে সুগন্ধ বেশি থাকে
  • শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখলেও ব্যবহার করা যায়
  • তেলে ভাজিয়ে সুগন্ধ তৈরি করা যায়
  • চুল ও ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায়
  • সকাল সকাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

চুলের যত্নে কারি পাতা

কারি পাতা চুলের যত্নে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ হওয়ায় চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

কারি পাতা চুল পড়া রোধ করে, চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, চুলকে ঘন এবং শক্তিশালী করে, চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুলের খুশকি দূর করে।

চুলের যত্নে কারি পাতার তেল, কারি পাতার হেয়ার মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন এছাড়াও কারি পাতা ভেজানো জল দিয়ে নিয়মিত চুল ধুলে চুল পড়া বন্ধ হয়।

বেলি ফুল সম্পর্কে 10টি মন ছুঁয়ে যাওয়া তথ্য

সারাংশ

আশা করি কারি পাতা সম্পর্কে জানতে পেরে আপনারা উৎসাহিত হয়েছেন। আরও তথ্যের জন্য আমাদের সাইটটি ঘুরে দেখুন। এবং মনে রাখবেন, কারি পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। তাই আজই ডায়েটে কারি পাতাকে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।