অ্যালোভেরা আমাদের দেশের একটি অতি জনপ্রিয় গাছ। এটির সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য এটি ব্যাপকভাবে পরিচিত। তবে অ্যালোভেরা গাছের যত্ন নেওয়া কিভাবে হয় তা অনেকেই জানেন না।
এই পোস্টে, আমরা আপনাকে অ্যালোভেরা গাছের যত্ন নেওয়ার সবকিছুই জানাব, যাতে আপনার অ্যালোভেরা গাছটি সবসময় সুস্থ এবং সুন্দর থাকে।
অ্যালোভেরা গাছ লাগানোর পদ্ধতি
যদিও আপনি বীজ থেকে অ্যালোভেরা গাছ লাগাতে পারেন, তবে আমাদের মতে আপনি গাছের চারা দিয়েই শুরু করুন। এইভাবে অ্যালোভেরা গাছ লাগানো সহজ এবং বেঁচে থাকার হারও বেশি।
ঘৃতকুমারীর চারা তিনভাবে লাগানো যায়:
- রুট সাকার বা মোথা: এগুলি মাটির নিচে গজানো চারা। বাণিজ্যিকভাবে লাগানো লাভজনক নয়।
- গাছের গোড়া থেকে গজানো চারা: এগুলি মাতৃগাছ থেকে আলাদা করে লাগানো হয়। ছয় মাস অপেক্ষা করে পাতা তোলা যায়।
- পুরনো গাছ: মোথা কেটে বাদ দিয়ে সরাসরি লাগানো হয়। তিন মাসের মাথায় পাতা তোলা যায়।
ঘৃতকুমারী চারা বছরের যেকোনো সময় রোপণ করা যায়। তবে জুন/আষাঢ় মাসে চারা রোপণ করলে তা সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ এই সময় আবহাওয়া চারা রোপণের জন্য অনুকূল থাকে। তবে শীত ও বর্ষাকালে চারা রোপণ না করাই ভাল।
আপনি অ্যালোভেরা গাছ বাইরে এবং ঘরে উভয় জায়গাতেই জন্মাতে পারেন। এগুলি খুবই সহনশীল গৃহস্থলির গাছ। যদিও অ্যালোভেরা গাছগুলি পূর্ণ সূর্যালোক পছন্দ করে, তবে এগুলি কম আলো এবং কম জল দিলেও বেঁচে থাকতে পারে।
কখনো কখনো দেখতে একটু লালচে বা বিধ্বস্ত লাগলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই গাছ বেঁচে যায়।
অ্যালোভেরা চাষের উপযুক্ত মাটি:
ঘৃতকুমারী চাষের জন্য সব রকম মাটিতেই চাষ করা যায়। তবে প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আশ মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
জল জমে না এরূপ উঁচু স্থানে ঘৃকুমারী চাষ করা ভালো। টবে লাগানোর ক্ষেত্রে মাঝারি আকারের টবে পাতা যেন মাটি ছুয়ে না থাকে এভাবে গোড়া উঁচু করে লাগাতে হবে।
হাড় গুড়ো, ডিমের খোসার গুড়ো মিশিয়ে মাটি তৈরি করলে অ্যালোভেরার বৃদ্ধি খুব ভালো হয়।
অ্যালোভেরা গাছ কোথায় রাখবেন
অ্যালোভেরা গাছের পরিচর্যায় সঠিক আলো খুবই জরুরী। যখন তাদের চারপাশে প্রচুর আলো থাকে তখন তারা সবচেয়ে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই আপনার অ্যালোভেরা গাছটি এমন জায়গায় রাখুন যেখানে তা যথেষ্ট উজ্জ্বল সূর্যালোক পাবে।
অ্যালোভেরা গাছ সাধারণত বাড়ির বাইরে সবচেয়ে ভালোভাবে জন্মে। যদি আপনি অ্যালোভেরা গাছটি ঘরে রাখতে চান তবে দক্ষিণমুখী জানালা একটি আদর্শ জায়গা।
কিন্তু আপনার বাড়িতে যদি যথেষ্ট সূর্যালোক না থাকে, তাহলে গাছগুলিকে আপনি কৃত্রিম আলোর নিচেও রাখতে পারেন।
শীতকালে টবের মাটির উপর সাদা নুড়ি পাথর ছড়িয়ে দিন। সাদা পাথর সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে, যা গাছের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে। এটি গাছের মাটিকে উষ্ণ রাখতেও সাহায্য করে, যা শীতকালে খুবই উপযোগী।
সার প্রয়োগ:
অ্যালোভেরা গাছে তেমন সার লাগে না, তবে যদি আপনি সার দিতেই চান তবে ভালো মানের কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে পারেন। বৃদ্ধির মরসুমে বছরে একবার এই সার দিন।
যদি আপনি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে না চান তবে যে কোনও জৈব সার বা ১৫ দিন অন্তর সরষের খইল ভেজানো জল ব্যবহার ব্যবহার করতে পারেন। কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করার দরকার হয় না।
শীতকালে অ্যালোভেরার গাছগুলি প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং আপনি খুব কমই কোনো বৃদ্ধি দেখতে পাবেন। তাই এই সময়ের মধ্যে আপনার গাছটিকে সার দিবেন না।
অ্যালোভেরা গাছে জল দেওয়ার নিয়ম:
অ্যালোভেরা গাছ ক্যাকটাসের মতোই শুকনো আবহাওয়ায় বেশ ভালভাবে বেঁচে থাকে। তাই , অ্যালোভেরার গোড়ায় জল দেওয়ার আগে মাটিতে আঙুল ঢুকিয়ে দেখুন যে মাটি সম্পূর্ণ শুকনো কিনা।
অ্যালোভেরা গাছে সবসময় ভালোভাবে জল দেবেন। টবে লাগানো গাছের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত জল দিন।
প্রতিদিন অ্যালোভেরার গাছে জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার মাটিও ক্রমাগত ভেজা রাখার প্রয়োজন নেই। ভেজা জবজবে মাটিই বেশিরভাগ অ্যালোভেরা গাছ মৃত্যুর কারণ। জল দেওয়ার আগে সবসময় আপনার মাটি শুকনো হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
সপ্তাহে একবার শুকনো পাতায় জল ছিটাতে একটি স্প্রেয়ার ব্যবহার করুন। এতে গাছের পাতাগুলি সবুজ এবং সুস্থ থাকবে।
অন্যান্য পরিচর্যা:
গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াাল রাখতে হবে। সকালের হালকা রোদ পায় এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
সারাদিন কড়া রোদ পেলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাবে, আবার একেবারে ছায়াযুক্ত জায়গাও এই গাছের জন্য উপযুক্ত নয়। হালকা রোদ আসে এমন আলোকিত জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
গাছে পরিমিত পরিমাণে জল প্রয়োগ করতে হবে। গোড়ার মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই জল দিতে হবে। পাতার পচন এড়াতে গাছের পাতা ভেজা মাটির সাথে লেগে আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
এইভাবে সহজেই স্থলপদ্ম গাছের পরিচর্যা করুন
অ্যালোভেরা গাছের রোগবালাই:
ঘৃতকুমারী গাছে পাতায় দাগ পড়া এক প্রধান সমস্যা। এভাবে আক্রান্ত গাছের পাতায় ধীরে ধীরে দাগ বড় হতে থাকে ও দাগের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৫ দিন পরপর চুন জলতে গুলে স্প্রে করে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
বর্ষাকালে ও গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে বা পাতা ভেজা মাটির সাথে লেগে থাকলে গোড়া পচা রোগ হয়। ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে এ রোগের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
এছাড়া পোকামাকড়ের আক্রমণ এ গাছে খুব বেশি দেখা যায় না।
অ্যালোভেরা পাতা সংগ্রহের নিয়ম:
অ্যালোভেরা গাছের পাতার রস ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এই রস ত্বককে আর্দ্র রাখে, ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে এবং ত্বকের বলিরেখা কমায়। তাই ঘরেই অ্যালোভেরা গাছ রোপণ করে তার পাতা থেকে রস বের করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যালোভেরা পাতা তোলার সবচেয়ে সহজ উপায় হল গাছের বাইরের দিকে থাকা বড় এবং পুরু পাতাগুলো হাতে করে তুলে নেওয়া অথবা ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে নেওয়া।
অ্যালোভেরা পাতা থেকে রস বের করতে পাতাটা দুই ভাগে কেটে নিয়ে চামচ দিয়ে পাতার ভেতরের জেল বের করে নিতে হবে। এই জেল সরাসরি ত্বকে লাগানো যেতে পারে অথবা ফ্রিজে রেখে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যালোভেরার উপকারিতা:
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একধরনের ঔষধি গাছ, যা হাজার হাজার বছর ধরে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যালোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকর। এটি ত্বককে আর্দ্র রাখে, ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে, ত্বকের ব্রণ ও চুলকানি দূর করে এবং ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যালোভেরা পাচনতন্ত্রের জন্যও উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দূর করে।
- অ্যালোভেরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- অ্যালোভেরা চুলের যত্নেও ব্যবহার করা যায়। এটি চুলকে মজবুত করে, চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
- ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল সরাসরি মুখে লাগাতে পারেন অথবা ত্বকের ফেসিয়াল ক্রিম বা টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- অ্যালোভেরা পাতার রস পান করতে পারেন। অ্যালোভেরা পাতার রস এক চামচ করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- অ্যালোভেরা পাতা থেঁতো করে চুলে লাগাতে পারেন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুল পড়া কমবে।
অ্যালোভেরা ব্যবহারের সাবধানতা:
- অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করার আগে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নিন।
- অ্যালোভেরা পাতার রস অনেকটা টক হয়, তাই খাওয়ার আগে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে নিন।
- অ্যালোভেরা পাতা বেশিক্ষণ রোদে রাখবেন না, কারণ এতে অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তুলসী গাছের উপকারিতা সম্বন্ধে না জানা কিছু তথ্য
শেষ কথা:
অ্যালোভেরা গাছের যত্ন নেওয়া খুব সহজ। উপরে উল্লিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করে আপনি আপনার অ্যালোভেরা গাছটিকে সবসময় সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে পারেন।
আপনি যদি অ্যালোভেরা গাছটির স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলি দেখুন। এবং অ্যালোভেরা গাছের যত্ন নেওয়ার এই টিপসগুলি আপনার বন্ধুদের এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না!