আপনি কি জানেন যে আপনার জমি অম্লীয় হতে পারে? অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষ করা কঠিন হতে পারে, তবে এটি অসম্ভব নয়। এই পোস্টে, আমরা অম্লীয় মাটিতে কোন ফসল চাষ করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
অম্লীয় মাটি কী?
যে মাটির পিএইচ মান ৭ এর নিচে থাকে সেটিকে অম্লীয় মাটি বলে। এর মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাংগানিজ ইত্যাদি খনিজ উপস্থিত থাকে। এই মাটিতে হুমাস কম থাকে।
মাটির ধরন
মাটির অম্লতা-ক্ষারত্ব মাটির উর্বরতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অম্লতা-ক্ষারত্বের পরিমাপ করা হয় পিএইচ স্কেলের মাধ্যমে। পিএইচ-এর মান অনুযায়ী মাটির অম্লতা-ক্ষারত্বের পরিমাপ এই রকম:
- ৫.৫ এর কম: অম্ল মাটি
- ৫.৫ থেকে ৬.৫: মৃদু অম্ল মাটি
- ৬.৫ থেকে ৭.৫: স্বাভাবিক মাটি
- ৭.৫ থেকে ৮.৫: মৃদু ক্ষারীয় মাটি
- ৮.৫ এর বেশি: ক্ষারীয় মাটি
অম্লীয় মাটিতে কোন ফসল চাষ করা যায়?
অম্লীয় মাটিতে নিম্নলিখিত ফসল চাষ করা যায়:
- ফল: আম, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, লেবু, কমলা, জাম, আপেল, আঙুর, ইত্যাদি।
- সবজি: আলু, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, বেগুন, শিম, মটরশুঁটি, লাউ, শশা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ইত্যাদি।
- ডাল: মুগ, ছোলা, মটর, ইত্যাদি।
- মসলা: আদা, রসুন, জিরা, ধনে, মরিচ, হলুদ, ইত্যাদি।
- কফি
- আখ
- চা
অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষের পদ্ধতি
অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নে বর্ণিত হল:
মাটির পরীক্ষা
মাটির অম্লতা নির্ণয়ের জন্য মাটির পিএইচ মান পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। মাটির পিএইচ মান ৭ এর নিচে হলে মাটিকে অম্লীয় বলে ধরা হয়। মাটির পিএইচ মান পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার পদ্ধতি রয়েছে। যেমন,
- ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা: ল্যাবরেটরিতে মাটির নমুনা পাঠিয়ে পিএইচ মান পরীক্ষা করা যায়।
- হাতে পরীক্ষা: বিভিন্ন ধরনের কিট বা টেস্ট সলিউশন ব্যবহার করে মাটির পিএইচ মান হাতেই পরীক্ষা করা যায়।
সার প্রয়োগ
অম্লীয় মাটিতে ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলির মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং জিংক বেশি পরিমাণে থাকে। তাই অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষ করার সময় এই পুষ্টি উপাদানগুলির সার প্রয়োগ করা উচিত।
- আয়রন: আয়রন গাছের সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয়। অম্লীয় মাটিতে আয়রনের অভাব দেখা দেয়। তাই অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষ করার সময় আয়রনযুক্ত সার প্রয়োগ করা উচিত।
- ক্যালসিয়াম: ক্যালসিয়াম গাছের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। অম্লীয় মাটিতে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। তাই অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষ করার সময় ক্যালসিয়ামযুক্ত সার প্রয়োগ করা উচিত।
- ম্যাগনেসিয়াম: ম্যাগনেসিয়াম গাছের সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয়। অম্লীয় মাটিতে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। তাই অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষ করার সময় ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত সার প্রয়োগ করা উচিত।
- জিংক: জিংক গাছের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। অম্লীয় মাটিতে জিংক অভাব দেখা দেয়। তাই অম্লীয় মাটিতে ফসল চাষ করার সময় জিংকযুক্ত সার প্রয়োগ করা উচিত।
জলনিষ্কাশন
অম্লীয় মাটিতে জল ধরে রাখা কঠিন হওয়ায় জলনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। জলনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে মাটিতে জল জমে থাকার ফলে মাটির অম্লতা আরো বৃদ্ধি পায়।
কীটনাশক সাবধানে ব্যবহার
কীটনাশক সাবধানে ব্যবহার করতে হবে যাতে মাটির অম্লতা আরো বৃদ্ধি না পায়। কীটনাশকের বেশি ব্যবহারের ফলে মাটিতে অ্যাসিড তৈরি হয়, যা মাটির অম্লতা বৃদ্ধি করে।
মাসিক মাটির পরীক্ষা
ফসলের চাষাবাদ চলাকালে মাসিক মাটির পরীক্ষা করে পিএইচ মান এবং উর্বরতার পরিমাপ করতে হবে। পিএইচ মান এবং উর্বরতার পরিমাপের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শেষ কথা
অম্লীয় মাটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে এবং উপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে ভালো ফলনমুখী ফসল চাষ করা সম্ভব। এই পোস্টে অম্লীয় মাটি, এর ধরণ এবং এতে কোন ফসল চাষের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনাদের পোস্টটি ভালো লাগবে।